হযরত মূসা-আঃ এর জীবনী
হযরত মূসা-আঃ ইসলামের চার মহান রাসুলদের একজন। তিনি ছিলেন বনি ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত নবী এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত গ্রন্থ প্রাপ্ত। ইসলাম ধর্ম, খ্রিষ্টান ধর্ম ও ইহুদি ধর্মে তাঁর জীবনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানিত।
জন্ম ও শৈশব
হযরত মূসা-আঃ জন্মগ্রহণ করেন মিশরে, বনি ইসরাইল গোত্রে। সে সময় ফেরাউন (ফারআওন) নামক এক জুলুমবাজ রাজা বনি ইসরাইলদের উপর অত্যাচার করত।
এক রাত্রে ফেরাউন স্বপ্নে দেখল যে, বনি ইসরাইলদের একজন ছেলে তার সিংহাসন ধ্বংস করবে। ফলে সে আদেশ দিল, বনি ইসরাইলদের ঘরে যেসব ছেলে জন্মাবে, তাদের সবাইকে হত্যা করতে। লাঠির মুজিজা
তখন হযরত মূসা-আঃ এর মা আল্লাহর নির্দেশে তাকে একটি ঝুড়িতে রেখে নদীতে ভাসিয়ে দেন।
আল্লাহর কুদরতে ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া (আ.) সেই শিশুকে পান এবং তাকে লালনপালনের জন্য গ্রহণ করেন।
যুবক হওয়ার পর হযরত মূসা-আঃ একদিন মিশরের রাস্তায় এক কিবতী (মিশরীয়) ও এক ইসরাইলির মধ্যে মারামারি দেখেন। তিনি ইসরাইলিকে সাহায্য করতে গিয়ে কিবতীকে আঘাত করেন, এবং সে মারা যায়।
এরপর তিনি মিশর ত্যাগ করে মাদয়ান অঞ্চলে চলে যান। সেখানে শুয়াইব (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং তাঁর কন্যাকে বিবাহ করেন।
কিছু বছর পর আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবুওয়ত দান করেন। তুর পাহাড়ে তিনি প্রথম ওহি লাভ করেন।
ফেরাউনের সঙ্গে সংঘর্ষ
আল্লাহর নির্দেশে মূসা (আ.) ফেরাউনের কাছে যান এবং তাকে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস আনতে বলেন।
ফেরাউন তা অস্বীকার করে এবং মূসা (আ.)-কে যাদুকর বলে দাবি করে।
মূসা (আ.)-এর লাঠি সাপ হয়ে যাওয়ার মতো অনেক মু’জিজা দেখানো হলেও ফেরাউন অহংকারবশত ঈমান আনে না।
বনি ইসরাইলদের মুক্তি
মূসা (আ.) আল্লাহর নির্দেশে বনি ইসরাইলদের নিয়ে মিশর ত্যাগ করেন।
ফেরাউন তাঁর সৈন্যসহ তাদের অনুসরণ করে।
আল্লাহর কুদরতে সমুদ্র পথ তৈরি হয়ে যায় এবং মূসা (আ.) তাঁর অনুসারীদের নিয়ে পার হয়ে যান।
ফেরাউন ও তাঁর বাহিনী ডুবে যায়।
তাওরাত লাভ ও জাতির বিভ্রান্তি
পরবর্তীতে তুর পাহাড়ে মূসা (আ.) তাওরাত লাভ করেন।
এসময় তাঁর অনুপস্থিতিতে বনি ইসরাইল গরুর পূজা করতে শুরু করে। মূসা (আ.) ফিরে এসে তাদের কঠোরভাবে শাস্তি দেন এবং তাদেরকে তাওরাত অনুযায়ী জীবন যাপনের নির্দেশ দেন।
মৃত্যু
হজরত মূসা (আ.)-এর মৃত্যু সুনির্দিষ্টভাবে কোথায় হয়েছিল তা নিয়ে মতবিরোধ আছে, তবে ধারণা করা হয় যে, তিনি ফিলিস্তিন সীমান্তবর্তী কোনো স্থানে মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার
হজরত মূসা (আ.)-এর জীবন ছিল ত্যাগ, ধৈর্য এবং নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ নবী ও নেতা, যিনি নিজের জাতিকে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনতে আজীবন চেষ্টা করে গেছেন।